সাধারনত বাংলাদেশে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক যে কোনো কর্মী বা শ্রমিকের চাকরি অবসান করার আইনগত অধিকার রাখে, তবে মালিককে আইন অনুযায়ী অবশ্যই বৈধ্যভাব উক্ত চাকরির অবসান করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে চাকরি অবসানের ক্ষেত্রে অনেক সময় সম্পূর্ণ আইন অথবা আংশিক আইন মানা হয় না। অর্থাৎ মালিক তার সুবিধামত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন, যেখানে কর্মী বা শ্রমিক তার আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

যে কোনো মালিক বা মালিকপক্ষ পরিস্থিতি অনুযায়ী লে-অফ, ছাঁটাই, ডিসর্চাজ, বরখাস্ত, এবং অপসারণ ইত্যাদি উপায়ে বৈধ্যভাবে কর্মী বা শ্রমিকের চাকরির অবসান করতে পারে। আর এই ধরনের অবসান যখন আইনি পন্থার ব্যত্যয় ঘটে, তখনই ইহাকে মালিক কর্তৃক অবৈধ্যভাবে চাকরির অবসানকে বোঝায়।

যদি কোনো কর্মী বা শ্রমিকের চাকরি আইনে বর্ণিত পন্থায় বা পদ্ধতি ব্যতীত লে-অফ, ছাঁটাই, ডিসর্চাজ, বরখাস্ত, অপসারণ অথবা অন্য যে কোন কারণে অবসান করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে উক্ত কর্মী বা শ্রমিক তার আইনি অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা-৩৩ অনুযায়ী শ্রম আদালতে লিখিতভাবে অভিযোগ পেশ করতে পারবেন। তবে সংক্ষুব্ধ কর্মী বা শ্রমিককে উক্ত অভিযোগ আদালতে পেশ করার পূর্বে আইনে বর্ণিত নির্ধারিত পদ্ধতি বা ধাপ অনুসরন করতে হবে।

প্রথম ধাপ: যখন কোনো কর্মী বা শ্রমিক তার চাকরির অবসানের তথ্য জানতে পারবেন এবং চাকরির অবসান অবৈধ্যভাবে হয়ে থাকে, তাহলে ঐদিন থেকে ত্রিশ (৩০) দিনের মধ্যে একটি অভিযোগ পত্র রেজিস্ট্রি ডাকযোগে মালিকের নিকট প্রেরণ করতে হবে । উক্ত অভিযোগ পত্রে, আপনার অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে ত্রিশ (৩০) দিন সময় দিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য আবেদন করবেন। এখানে উল্লেখ্য যে, অভিযোগ পত্রটি মালিক বা মালিকপক্ষ সরাসরি গ্রহণ করে যদি লিখিত প্রাপ্তি স্বীকার প্রদান করে, তাহলে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে না পাঠালেও চলবে।

দ্বিতীয় ধাপ: এই ধাপে দুই ধরনের চিত্র হতে পারে। (চিত্র:০১) মালিক বা মালিকপক্ষ অভিযোগ পত্র প্রাপ্তির পর বিষয়টি আমলে নিয়ে ত্রিশ (৩০) দিনের মধ্যে অভিযোগ সর্ম্পকে তদন্ত করবেন এবং সংক্ষুব্ধ কর্মী বা শ্রমিককে শুনানীর সুযোগ দিয়ে তৎসর্ম্পকে তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে কর্মী বা শ্রমিককে জানাবে। এক্ষেত্রে মালিকের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টি কর্মী বা শ্রমিকের পক্ষে অথবা বিপক্ষে যেতে পারে। (চিত্র:০২) মালিক বা মালিকপক্ষ অভিযোগ পত্র প্রাপ্তির পর ত্রিশ (৩০) দিনের মধ্যে বিষয়টি সর্ম্পকে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করতে ব্যর্থ হতে পারেন।

তৃতীয় ধাপ: যখন চিত্র:০১ অনুযায়ী মালিকের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ কর্মী বা শ্রমিক অসন্তুষ্ট হয় অথবা চিত্র:০২ অনুযায়ী মালিক বা মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত প্রদানে ব্যর্থ হয়, তাহলে উভয় ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ কর্মী বা শ্রমিক উল্লেখিত ত্রিশ (৩০) দিন সময় অতিক্রান্ত হওয়ার তারিখ থেকে ত্রিশ (৩০) দিনের মধ্যে অথবা, ক্ষেত্রমতে, মালিকের সিদ্ধান্তের তারিখ থেকে ত্রিশ (৩০) দিনের মধ্যে শ্রম আদালতে লিখিতভাবে অভিযোগ পেশ করতে হবে।

তাহলে আমরা আদালতে অভিযোগ পেশ করার ধাপগুলো জানতে পারলাম । এবার আমরা শ্রম আদালতের পদক্ষেপ সমূহ আলোচনা করব।

প্রথম পদক্ষেপ: বিজ্ঞ শ্রম আদালত উক্ত অভিযোগ প্রাপ্তির পর উভয় পক্ষকে নোটিশ দিবেন এবং তাদের বক্তব্য শ্রবণ করবেন।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ: বিজ্ঞ শ্রম আদালত উক্ত বক্তব্য ও সকল সাক্ষ্য প্রমাণাধীন বিবেচনা করে মামলার অবস্থা বুঝে আইনি প্রতিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেরূপ আদেশ দেওয়া ন্যায়সঙ্গত সেরূপ আদেশ প্রদান করবেন।

আসুন এবার আমাদের জানা প্রয়োজন বিজ্ঞ শ্রম আদালত সাধারনত কি ধরনের আদেশ প্রদান করে থাকেন। বিজ্ঞ আদালত অন্যান্য প্রতিকারের মধ্যে,অভিযোগকারীকে, বকেয়া মজুরীসহ বা ছাড়া, তার চাকরিতে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিতে পারেন এবং কোন বরখাস্ত, অপসারণ বা ডিসচার্জের আদেশকে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা-২৩(২) এ উল্লিখিত কোন লঘু দন্ডে পরিবর্তিত করতে পারেন।

কিন্তু, যদি কোনো সংক্ষুব্ধ কর্মী বা শ্রমিক বিজ্ঞ শ্রম আদালতের প্রদত্ত আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ হয়, সেক্ষেত্রে উক্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদেশের ত্রিশ (৩০) দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের নিকট আপীল দায়ের করতে পারবেন। এবং এই আপীলের উপর উহার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

তবে অব্যশই দুইটি (০২) বিষয় বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে যে, আইনে উল্লিখিত সময়ের পরে অভিযোগ দাখিল করলে তা শ্রম আদালতে প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হবে। অন্যদিকে, বৈধ্যভাবে চাকরি অবসানের ক্ষেত্রে কোন অভিযোগ করা যাবে না।

সংক্ষুব্ধ কর্মী বা শ্রমিক নিজে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে শ্রম আদালতে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন । এই ধারায় কোন অভিযোগ বা আপীল দায়েরের জন্য কোন কোর্ট-ফিস প্রদান করতে হবে না।

সূত্র: বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬

খায়রুল হাসান

অ্যাডভোকেট ও লিগ্যাল কনসালটেন্ট

[email protected]