ডিজিটাল যুগের বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাইবার অপরাধ। কারণ সাইবার অপরাধ অনলাইন জগতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথেও বাংলাদেশে ব্যপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সাইবার অপরাধ। সুতরাং আমাদের সকলের সাইবার অপরাধ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখা উচিত। যদি কখনোও সাইবার অপরাধের শিকার হন, সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী বা কিভাবে প্রতিকার পাবেন ।  

শুধুমাত্র সঠিক জ্ঞানের অভাবে সাইবার অপরাধে শিকার ব্যক্তিরা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের উপযুক্ত প্রতিকার পেতে ব্যর্থ হন। সুতরাং আসুন আমরা জেনে নেই, যদি আপনি সাইবার অপরাধের শিকার হন সেক্ষেত্রে আপনার করনীয় কী হবে: –

প্রথম ধাপে– আপনার কাজ হবে সকল ধরণের প্রমাণ সংরক্ষন করা। যথা –

(১) সংশ্লিষ্ট আইডির স্ক্রীনশট/ পোষ্টের তারিখ ও সময় সহ স্ক্রীনশট;

(২) লিংক;

(৩) মোবাইল নাম্বার (ভুয়া কলের ক্ষেত্রে);

(৪) ইমেইল এড্রেস/ইমেইল এর কপি (ভুয়া ইমেইলের ক্ষেত্রে);

(৫) আইপি অ্যাড্রেস (আপনার);

(৬) সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম/প্রোফাইল লিংক (যদি জানা থাকে); এবং

(৭) অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা সম্পর্কিত নথি/ডকুমেন্টস সমূহ।

স্ক্রীনশট নেবার ক্ষেত্রে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন Address Bar এর URL টি দেখা যায়। সঠিকভাবে ইউ আর এল (URL) দেখা না গেলে আপনার অভিযোগটি গ্রহণে অথবা মামলার ক্ষেত্রে প্রতিকার পেতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষভাবে মনে রাখবেন কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট তথ্য-প্রমাণ মুছে ফেলবেন না বা ডিলিট করবেন না।

দ্বিতীয়ত ধাপে – আপনার কাজ হবে যত দ্রুত সম্ভব উপরোক্ত প্রমাণসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানো। সুতরাং আপনাকে জানতে হবে আপনি কোথায় এবং কিভাবে আপনার এই অভিযোগটি জানাবেন। 

অভিযোগ জানাবেন কোথায়:

(১) আপনার অবস্থান যদি ঢাকা মহানগর এলাকায় হয় তাহলে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit কে অথবা সংশ্লিষ্ট থানায়।  

(২) অন্যদিকে ঢাকার বাহিরে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায়। 

(৩) ভুক্তভোগী নারীরা সরাসরি বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে পরিচালিত Police Cyber Support for Women (PCSW) ইউনিটকে অভিযোগ জানাতে পারবেন। 

অভিযোগ জানাবেন কিভাবে:  

আপনি মূলত পাঁচ ভাবে অভিযোগ জানাতে পারেন:

(১) সরাসরি উপস্থিত হয়ে

(২) ইমেইলে

(৩) অ্যাপের সাহায্যে

(৪) ফোনে

(৫) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে

অভিযোগ দায়েরের জন্য যোগাযোগের তথ্য:

(১) ইমেইল

ডিএমপি’র Cyber Crime Unit – [email protected]

ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশন – [email protected] , [email protected]

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) – [email protected]

Police Cyber Support for Women (PCSW) ইউনিট – [email protected]

সিআইডি সাইবার ইউনিট – [email protected]

(২) অ্যাপ

 ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট এর ‘Hello CT’ অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ)।

(৩) ফোন

জাতীয় জরুরী সেবা – ৯৯৯

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) –  ০১৭৬৯৬৯১৫২২ (01769691522)

Police Cyber Support for Women (PCSW) ইউনিট – ০১৩২০০০৮৮৮ (01320000888)

সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশন, ডিবি – ০১৭৬৯৬৯৫১৪৪ (01769695144)

সিআইডি সাইবার ইউনিট –  ০১৭৩০৩৩৬১৯৭ (01730336197) বা ০১৩২০১০১৪৮ (01320010148)

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সেল – ০১৭৬৬৬৭৮৮৮৮ (01766678888)

(৪) ফেসবুক পেজ

ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশন – https://www.facebook.com/cyberctdmp বা https://www.facebook.com/cttcdmp   

সিআইডি সাইবার ইউনিট – https://www.facebook.com/cpccidbdpolice/ 

Police Cyber Support for Women (PCSW) ইউনিট – https://www.facebook.com/PCSW.PHQ 

(৫) সরাসরি

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিট কার্যালয়- ৩৬, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্মরণী, রমনা, ঢাকা।

অথবা নিজ এলাকার থানা। 

তৃতীয়ত ধাপে – আপনাকে মামলা দায়ের করতে হবে। আপনি মূলত দুটি জায়গার মামলা করতে পারবেন।  

প্রথমটি – থানায় এজাহার দায়ের মাধ্যমে মামলা করতে পারবেন। 

দ্বিতীয়টি – সরাসরি সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা করতে পারবেন।  

আপনি প্রথমে চেষ্টা করবেন আপনার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার জন্য, যদি কোন কারনে থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করে অথবা আপনি যদি মামলা দায়ের করতে ব্যর্থ হন তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবির সহায়তা সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা করতে পারবেন। তবে আপনাকে মামলা করার সময় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে হবে।

এখানে বলে রাখা ভাল আপনি ইচ্ছে করলে দ্বিতীয় ধাপ এবং তৃতীয় ধাপ দুটি একত্র করতে পারেন।  

বিশেষ কিছু সতর্কতাঃ
(১) কখনো সাইবার অপরাধের শিকার হলে কোন অবস্থাতেই বিচলিত হবেন না বা ভয় পাবেন না।  
(২) আপনি আপনার পরিবার বা আপনজনের সাথে বিষয়টি শেয়ার করুন। 
(৩) কোন অবস্থাতেই প্রমাণাদি রাখতে ব্যর্থ হবেন না। 
(৪) হঠাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ার একাউন্ট (যেমন ফেসবুক একাউন্ট) ডিলিট  বা  ডিএক্টিভ করে দিবেন না। 
(৫) সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাবেন। 
(৬) তৎক্ষণাৎ যদি আপনি  কোন ধরনের প্রদক্ষেপ নিতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে আপনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি সাথে কথা বলেন অথবা একজন বিজ্ঞ আইনজীবী সহায়তা নিতে পারেন।

আশা করি আপনারা এখন থেকে সচেতন থাকবেন এবং অন্যকেও সচেতন করতে এই লেখাটি শেয়ার করে দিন। মনে রাখবেন আপনার সময় মত উপযুক্ত পদক্ষেপই আপনাকে প্রতিকার পেতে সহায়তা করবে। আপনাদের সচেতনতা করাই আমাদের প্রয়াস। একমাত্র সচেতনতাই পারে আপনাকে সাইবার অপরাধের শিকার হতে রক্ষা করতে। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় অনলাইন জগত হউক অপরাধমুক্ত। ভালো থাকবেন।

কে, এম, খায়রুল হাসান আরিফ

অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

এবং

কনসালটেন্ট ও ফাউন্ডার

এডভোকভাইস

(ডাটা প্রটেকশন এন্ড প্রাইভেসি | সাইবার ক্রাইম | টেকনোলজি | মিডিয়া | ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি | ইমিগ্রেশন ও ভিসা | ভ্যাট ও ট্যাক্স | যে কোনো আইনগত বিষয়ে পরামর্শের জন্য ইমেইল করুন – [email protected] or [email protected] )